ঢাকা, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ হলে বাঁধতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:২১  
আপডেট :
 ১২ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:১৯

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ হলে বাঁধতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
ফাইল ছবি।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যেকার যুদ্ধের সুর এখন পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বাজছে। যে কোনো মুহুর্তে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে ইরান ও ইসরায়েল। দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য আর বিবৃতি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ আসন্ন। এই যুদ্ধ শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ থাকববে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্য, ইরান ও ইসরায়েল এই যুদ্ধের আবহে পেছন থেকে কল নাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা পশ্চিমা বিশ্ব। ফলে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধ বিশ্বের আসন্ন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম হয়ে উঠতে পারে।

এছাড়া বর্তমানে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি উত্তর কোরিয়া ও তাইওয়ানের প্রতি চীনের রক্তচক্ষু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বার্তা-বাতাস দিচ্ছে। এই বাতাসে মাতোয়ারা হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান প্রক্সি প্রক্সি খেলার খোলস ছেড়ে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে কি না তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা আর কল্পনা।

সিএনএনের আজ বৃহস্পতিবারের (১১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতকাল ধরে এই অঞ্চলে যে লড়াই চলছিল, এটি একদিকে মূলত ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া এবং অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্রদের মধ্যেকার টিট-ফর-ট্যাট হামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ এই আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে যে, উভয়ের মধ্যে চলমান প্রক্সি লড়াই সরাসরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।

গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই ইরান নিজের বাড়ির উঠান বলে মনে করে এবং এ অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতির ঘোরবিরোধী বলে উল্লেখ করে সিএনএনের প্রতিবেদনটির ভাষ্য, এই কারণেই গত কয়েক দশক ধরে তারা আঞ্চলিক ইসলামপন্থী, পশ্চিমা ও ইসরায়েল-বিরোধী মিলিশিয়াদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। বর্তমানে এর ফল পেতে শুরু করেছে ইরান। দেরিতে হলেও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের পারঙ্গমতা জানান দিতে সক্ষম হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের অভিজ্ঞতা ততটা সুখকর না হওয়ায়, বছরের পর বছর ধরে এ অঞ্চল থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ভাগ্য ফের তাদের মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে ফিরিয়ে এনেছে। যদিও ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর আগ থেকেই ৩০ হাজারের বেশি সেনাসহ এ অঞ্চলে তাদের একটি শক্তিশালী সামরিক অবস্থান ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার অনেকগুলো কারণের একটি বিশেষ কারণ হলো, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। যারা একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক জলপথ লোহিত সাগরে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এতে বিশ্ব বাণিজ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বেশ বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। ফলশ্রুতিতে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোকে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করেছে। হুতিরা এখানেই থেমে নেই, হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি তাদের অর্থায়নও করছে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিছিয়ে নেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক অঞ্চলে নিজেদের বা মিত্রদের অবস্থান লক্ষ্য করে পাল্টাপাল্টি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে তারা।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন করে প্রায় এক হাজার ২০০ সেনার পাশাপাশি নেভি ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপের হাজারো সেনা ও মোটামুটি দুই হাজার জনবল সম্বলিত একটি মেরিন এক্সপিডিশনারি ইউনিট মোতায়েন করেছে। তাছাড়া, ইরাক ও সিরিয়াসহ কিছু জায়গায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ইরান ও তার মিত্রদের চেয়েও বেশি।

তবে এখন পর্যন্ত একে অপরের সম্মুখ লড়াই এড়াতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইরাকে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা করছে। অপরদিকে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে। তেহরানও ইরাক, সিরিয়া ও পাকিস্তানে ইরান-বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলার কথা জানিয়েছে। যদিও ইরানের হামলার পাল্টা জবাব দিয়েছে পাকিস্তান।

এদিকে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের সন্দেহভাজন হামলার কারণে তেহরান এবার পাল্টা হামলা চালাতে পারে বলে জোর শঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থায় ইসরায়েল চ্যালেঞ্জিং সময়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। একইসঙ্গে ইসরায়েল সব ফ্রন্টে হামলার জন্য প্রস্তুত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সাধারণ একটি নীতি আছে: যারা আমাদের আঘাত করবে, আমরা তাদের আঘাত করব।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, ইসরায়েলের দূরপাল্লার হামলায় প্রাথমিক অস্ত্র হচ্ছে এফ-১৫ যুদ্ধবিমান। নেতানিয়াহু তার বক্তৃতার জন্য এই ঘাঁটিকে বেছে নেওয়ায় এটিকে ইরানকে লক্ষ্য করার হুমকির একটি ইচ্ছাকৃত ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় তেহরানের কনস্যুলেটে তেল আবিবের সন্দেহভাজন হামলার পর ইরানের সাথে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী সব ফ্রন্ট থেকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

ইরানের সম্ভাব্য হামলার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘অন্যান্য ফ্রন্ট থেকে চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অন্যদিকে গত বুধবার (১০ এপ্রিল) মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশের মতো ইরানেও পবিত্র ঈদুর ফিতর উদযাপিত হয়েছে। এদিন দেশটির রাজধানী তেহরানের গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদে ঈদের নামাজে ইমামতি করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। নামাজের পর নিয়মানুযায়ী মুসল্লিদের উদ্দেশে দেন খুতবাও। আর খুতবার সময়েই দেখা যায় বিরল দৃশ্যটি। খুতবার সময় ইমামের হাতে সাধারণত একটি দণ্ড বা লাঠি দেখা যায়। কিন্তু আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির হাতে দেখা গেল অত্যাধুনিক বন্দুক।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতারা ঈদের খুতবার প্রধান আলোচ্য ছিল গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার বিষয়টি। ঈদের খুতবায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালানোর জন্য ইহুদিবাদী ইসরাইলকে শাস্তি পেতেই হবে।

তিনি বলেন, ইহুদিবাদী সরকার আরেকটি ভুল করেছে এবং তারা দামেস্কের ইরানি কনুস্যলেটে হামলা চালিয়েছে। কোনো দেশের কনস্যুলেটসহ অন্যান্য কূটনৈতিক মিশন ওই দেশের ভূখণ্ড বলে বিবেচিত হয়। তারা যখন আমাদের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়েছে তখন মূলত তারা আমাদের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে। এরপর তিনি সুস্পষ্ট ঘোষণা দেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলকে শাস্তি পেতেই হবে এবং শাস্তি দেয়া হবে।

এছাড়া ইরানের পাল্টা হামলার আশঙ্কার মধ্যেই ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইরান হামলা করলে ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, যেমনটা আমি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বলেছি, ইরান এবং এর প্রক্সি বাহিনীগুলোর হুমকি থেকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় আমাদের প্রতিশ্রুতি লোহার আবরণের মতো দৃঢ়। আমি আবারও বলছি, লোহার আবরণের মতো দৃঢ়।

উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইসরাইলি বিমান হামলায় সিরিয়া ও লেবাননে ইরানের সেনাবাহিনীর এলিট ফোর্স আইআরজিসির দুই শীর্স কমান্ডারসহ অন্তত ৮ জন কর্মকর্তা নিহত হন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত